২০২৩ সালে বাংলাদেশে সফরে আসবেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।
শনিবার (১৯ নভেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা ইউসেফ এসা আল দুহাইলান এ কথা জানান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ ২০২৩ সালের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। বিন সালমানের এই সফরটি বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সৌজন্য সাক্ষাতে সৌদি রাষ্ট্রদূত সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ পত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে হস্তান্তর করেন।
৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা ইউসেফ বলেন, ১৯৮৫ সালে সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ঢাকা সফরের পর এটিই কোনো সৌদি যুবরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর। সুতরাং এই সফর দুই দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরের তারিখ ও সময়সূচি কূটনৈতিক চ্যানেলে পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে।
রাষ্ট্রদূত আশা করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। যেগুলো দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি যুবরাজের সফর দ্বিপাক্ষিক এ সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি জনগণের হৃদয়ে সৌদি আরবের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমাদের সম্পর্ক সময়ের সাথে আরও উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে।
বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হালাল খাদ্য শিল্পে বিনিয়োগসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আরও সৌদি বিনিয়োগ আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সৌদি উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশেষ করে মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ করতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সৌদি আরব যদি এখানে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন পাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রশংসা করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের কিছু উদ্যোগ চলছে বলেও জানান তিনি।
সৌদি ফাস্ট-ফুড সার্ভিস ‘হারফি’ সহ কয়েকটি সৌদি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করছে বলে জানান তিনি।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের মেগাপ্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত মাসে সৌদি যুবরাজ পাঁচটি দেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তহবিল বরাদ্দ করেছেন। এই ধরনের তহবিল পেয়ে বাংলাদেশও লাভবান হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে বিশাল ক্ষেত্র এখনো অনাবিষ্কৃত।
মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহের জন্য সৌদি আরবের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে বাংলাদেশ সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।
১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন সৌদি দূত।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদি আরব বাংলাদেশে পাশে থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা।
বাংলাদেশি ও সৌদি বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে সৌদি আরবে সার কারখানা নির্মাণে বিষয়ে কথা বলেন।
সৌদি দূত বলেন, প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে আমাদের কাজ করা দরকার।
বিলম্বে পরিশোধে শর্তে বাংলাদেশের কাছে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নে এটি আমাদের প্রয়োজন। আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি দূতের মাধ্যমে দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক এবং সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদকে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্পাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
পাঠকের মতামত